ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সচেতনতা
মানবজীবনের অন্যতম নেয়ামত স্বাস্থ্য। এটি এমন এক সম্পদ যা আমাদের ব্যবহারিক জীবনের অনেক ক্ষেত্রে এমনকি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্যও জরুরি। ইসলামের বিধিবিধানগুলো সুন্দরভাবে পালন করার জন্যও স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা প্রয়োজন। কারণ শারীরিক শক্তি ও মানসিক মনোবল ছাড়া ইবাদতেও মন বসে নামানবজীবনের অন্যতম নেয়ামত স্বাস্থ্য। এটি এমন এক সম্পদ যা আমাদের ব্যবহারিক
জীবনের অনেক ক্ষেত্রে এমনকি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্যও জরুরি। ইসলামের বিধিবিধানগুলো সুন্দরভাবে পালন করার জন্য ও স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা প্রয়োজন। কারণ শারীরিক শক্তি ও মানসিক মনোবল ছাড়া ইবাদতেও মন বসে না। তা ছাড়া আল্লাহর পথে সংগ্রাম করার জন্য শক্তি ও স্বাস্থ্য প্রয়োজন। তাই সুস্থ সবল মুমিন আল্লাহর কাছে অবশ্যই অধিক প্রিয়। রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘দুর্বল মুমিনের তুলনায় শক্তিশালী মুমিন অধিক কল্যাণকর ও আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে’। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৯৪৫)
অন্য হাদিসে আছে, ‘দুটি নেয়ামতের বিষয়ে বেশির ভাগ মানুষ অসতর্ক ও প্রতারিত।সুস্থতা ও অবসর।’ (বুখারি শরিফ ৫/২৩৫৭)ইসলামের দৃষ্টিতে, ‘অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করার চেয়ে সুস্থ অবস্থায় স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উত্তম।’ ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, ‘আল বিকায়াতু খাইরুম মিনাল ইলাজ’। বর্তমানে চিকিৎসাবিজ্ঞান ইসলামের সেই থিউরি স্বীকার করে ঘোষণা করে, ‘রোগ প্রতিরোধ রোগ নিরাময়ের চেয়ে উত্তম।’ বর্তমানে এ কথাও বলা হয় যে, ‘রোগ প্রতিরোধ রোগ নিরাময়ের চেয়ে সস্তা।’ আধুনিক বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার এই যুগে বিজ্ঞান যা আবিষ্কার করছে মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা: আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে তা বলে দিয়ে গেছেন। তিনি ঘোষণা করে গেছেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দাকে নেয়ামত সম্পর্কে সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটি করা হবে তা হলো তার সুস্থতা সম্পর্কে। তাকে বলা হবে আমি কি
তোমাকে শারীরিক সুস্থতা দিইনি?’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ৩৩৫৮)চিকিৎসা নেয়ার গুরুত্ব : রোগাক্রান্ত হলে অনতিবিলম্বে চিকিৎসা নেয়া ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে জরুরি। চিকিৎসা নেয়াকে তাকওয়া পরিপন্থী মনে না করে আরোগ্য লাভের জন্য চিকিৎসা নেয়ার জন্য রোগীকে উৎসাহিত করেছে ইসলাম। রাসূলুল্লাহ সা: নিজে অসুস্থ হলে চিকিৎসা নিতেন। লোকদের চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা চিকিৎসা নাও, কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি। তবে একটি রোগ আছে যার কোনো প্রতিষেধক নেই, তাহলো বার্ধক্য।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৮৫৭)
অন্য হাদিসে আছে, হজরত আনাস ইবনে মালেক রা:-কে শিঙ্গা দান কারীর শিঙ্গারবিনিময় উপার্জন হালাল কি না জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: শিঙ্গা নিতেন। আবু তায়বাহ তাকে শিঙ্গা লাগান। রাসূলে কারিম সা: তাকে দুই সা (একটি নির্দিষ্ট ওজনের নাম) খাদ্যদ্রব্য দেয়ার নির্দেশ দেন। এবং তার মালিক পক্ষের সাথে আলোচনা করে তার ট্যাক্সের পরিমাণ কমিয়ে দেন। আর বলেন, ‘যা কিছু দ্বারা তোমরা
চিকিৎসা কর তার মধ্যে উত্তম হলো শিঙ্গা লাগানো।’ (মুসলিম শরিফ, ২/২২ হাদিস নং ৪০০৭) আরেকটি হাদিসে আছে, হজরত সা’দ (রা:) বলেন, ‘আমি একবার ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন রাসূলুল্লাহ সা: আমাকে দেখতে এসে তাঁর হাত মোবারক আমার বুকের ওপর রাখেন। আমি অন্তরে এর শীতলতা অনুভব করি। অতঃপর তিনি বলেন, তুমি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছ। তুমি ছাকীফ গোত্রের হারেস ইবনে কালদার কাছে যাও। সে (এই রোগের) চিকিৎসা করে।’ (আবু দাউদ হাদিস ২/৫৪১, হাদিস নং ৩৮৬৯, মাজমাউযযাওয়াইদ ৫/১৪৪-১৪৫ হাদিস নং ৮৩০০)
রাসূল সা: অসুস্থ ব্যক্তিকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা করাতে এবং এ ব্যাপারেসবিশেষ সতর্ক থাকতে নিদের্শ দিতেন। (যাদুল মাআদ) হারাম বস্তু ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা রোগও নাজিল করেছেন রোগের প্রতিষেধকও নাজিল করেছেন। প্রত্যেক রোগের চিকিৎসা রয়েছে। সুতরাং তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর। তবে হারাম বস্তু দ্বারা চিকিৎসা নিয়ো না।’
তিনি আরো ইরশাদ করেন, ‘হারাম বস্তুতে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য আরোগ্য বা রোগমুক্তি রাখেননি।’ (যাদুল মাআদ) এই সব হাদিস দ্বারা বুঝা যায় ইসলামের দৃষ্টিতেচিকিৎসা গ্রহণ করা শুধু বৈধই নয় বরং তা গ্রহণ করাই কাম্য। সুস্থ থাকার ইসলাম নির্দেশিত উপায় : যেসব কারণে মানুষ অসুস্থ হতে পারে ইসলামিশরিয়ত সেসব থেকে বেঁচে থাকার জোর তাগিদ দিয়েছে। তাই ইসলামি শরিয়ত কতৃর্ক নির্দেশিত স্বাস্থ্যনীতি মেনে চলা ও অসুস্থ হলে চিকিৎসা নেয়া প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য জরুরি। ১. খাদ্য পানীয় মানুষের রোগব্যাধির অন্যতম কারণ। হাদিস শরিফে আছে, ‘পেট সব রোগের কেন্দ্রস্থল’। ইসলাম এ বিষয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছে এবং অতিভোজন করতে নিরুৎসাহিত করেছে। সাথে সাথে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্য নিষিদ্ধ করেছে। পবিত্র কুরআনে আছে, ‘তোমরা খাও ও পান কর এবং অপচয় কর না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা আরাফ : ৩১)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন